অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের লবনখনির শহর নামে পরিচিত সোলেদারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনারা। এমনকি, সোলেদার থেকে পিছু হটার কথা স্বীকার করে নিয়েছে ইউক্রেনও। যদিও ইউক্রেনের সেনারা এটিকে তাদের রণকৌশল হিসেবে দাবি করেছেন।
ইউক্রেনের যেসব অঞ্চলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে সোলেদার তার অন্যতম। আর গত কয়েক মাসের যুদ্ধে এটিই রাশিয়ার প্রথম জয়। গত সপ্তাহেই রুশ সেনাবাহিনী শহরটির দখল নেওয়ার দাবি করে। তবে সেসময় ইউক্রেন তা অস্বীকার করে।
অনেকে বলছেন, সোলেদারের এ জয় রাশিয়ার জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে, এটি যুদ্ধরত রুশ সেনাদের মনোবল চাঙ্গা করতে ব্যাপক সাহায্য করবে, কারণ গত কয়েকমাসে যুদ্ধে শুধু পরাজয়ের মধ্য দিয়েই যাচ্ছিল পুতিন বাহিনী।
তাছাড়া, সোলেদার ও প্রতিবেশী শহর বাখমুতের দখল নিতে পারলে, রাশিয়ার জন্য ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে। সোলেদারের লবন খনিগুলো থেকেও লাভবান হতে পারে রাশিয়া।
বিবিসি জানায়, সোলেদার ও বাখমুতে তুমুল বন্দুক-কামান লড়াই চলেছে। শহর দুটির বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে, ধূসর প্রান্তর ও বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সয়ংক্রিয় সব অস্ত্রের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে।
ইউক্রেনীয় সেনাদের একটি ইউনিটের কমান্ডার আন্দ্রিয় বলেন, বর্তমানে রুশ বাহিনী আমাদের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। তারা আমাদের ঘাটি থেকে এক কিলোমিটার দূরের মধ্যে রয়েছে। আমরা বেশ কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউক্রেনীয় সেনার অভিযোগ, সোলেদার হাতছাড়া হওয়ার মূল কারণ হলো, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। একই সঙ্গে তারা এটাও স্বীকার করেন, রাশিয়া এখন সোলেদারের চেয়েও বড় ও গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুতের দখল নিতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
যদিও সোলেদারের কাছের গ্রামগুলোতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর কয়েকটি ইউনিট এখনো জোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তারা রুশ বাহিনী থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার দূরে অবস্থান করছে।
আন্দ্রিয়র দাবি, এটি একটি নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি। আমি আমার কমান্ডারের প্রতি বিশ্বাস রাখছি। কখনো কখনো এক পা পিছিয়ে এসে, পরে পূর্ণ শক্তি নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করে শত্রুকে পরাজিত করা যাবে।
বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের ওই দুই অঞ্চলে আসলে কী চলছে, তা স্পষ্টভাবে জানা সম্ভব হয়নি। তবে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ার শব্দ, যুদ্ধবিমান উড়ে যাওয়ার শব্দ, কামান-রকেটের গোলা বিস্ফোরণের ক্রমাগত শব্দ বলে দিচ্ছে, রুশ বাহিনী একেবারে খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।
ইউক্রেনের ৪৬তম এয়ার অ্যাসল্ট ব্রিগেডের এক প্রেস কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। মাঝেমধ্যে একদিনে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যুদ্ধ চলছে। তাছাড়া, রুশ বাহিনীর অবস্থান আগে থেকে অনুমান করা যাচ্ছে না।
বিবিসি বলছে, সোলেদার শহরের ভেতর ও চারপাশ ঘিরে যে লড়াই চলছে, তা ইউক্রেনে হওয়া সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধগুলোর একটি। মূলত রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদের গোষ্ঠী ওয়াগনার গ্রুপ সেখানে লড়াই করছে ও ভয়াবহ এ যুদ্ধে গ্রুপটিকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সোলেদারের নিয়ন্ত্রণ পেতে চলেছে। সূত্র: বিবিসি
Leave a Reply